ফরাসিদের আফ্রিকায় উপনিবেশ: ইতিহাস, প্রভাব ও দেশসমূহের তালিকা
ভূমিকা
আধুনিক আফ্রিকার ইতিহাসে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর প্রভাব ব্যাপক। বিশেষ করে, ফ্রান্স আফ্রিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে উপনিবেশ গড়ে তোলে। ১৯শ ও ২০শ শতকে, ফরাসিরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তার করে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব ফ্রান্স কোন কোন আফ্রিকান দেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল, তার প্রভাব, এবং এসব দেশের বর্তমান অবস্থান।
ফরাসি উপনিবেশবাদের সূচনা
ফ্রান্সের আফ্রিকা উপনিবেশ করার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক, কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত করা, এবং তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া। ১৮৮৪ সালের বার্লিন সম্মেলন ছিল ইউরোপীয় দেশগুলোর আফ্রিকা ভাগাভাগির আনুষ্ঠানিক সূচনা। ফ্রান্স সেই ভাগাভাগিতে বিশাল অংশ পায়।
ফরাসি উপনিবেশভুক্ত আফ্রিকান দেশের তালিকা
ফরাসিরা দুইটি প্রধান অঞ্চলে তাদের উপনিবেশ বিস্তার করেছিল:
-
ফ্রেঞ্চ ওয়েস্ট আফ্রিকা (Afrique Occidentale Française - AOF)
-
ফ্রেঞ্চ ইকুয়েটোরিয়াল আফ্রিকা (Afrique Équatoriale Française - AEF)
ফ্রেঞ্চ ওয়েস্ট আফ্রিকার দেশসমূহ:
-
সেনেগাল
-
মালি
-
বুরকিনা ফাসো (পূর্বে আপার ভল্টা)
-
গিনি
-
কোত দিভোয়ার (আইভরি কোস্ট)
-
নাইজার
-
বেনিন (পূর্বে দাহোমে)
-
মরিতানিয়া
ফ্রেঞ্চ ইকুয়েটোরিয়াল আফ্রিকার দেশসমূহ:
-
চাদ
-
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র
-
কঙ্গো (ব্রাজাভিল)
-
গ্যাবন
উপসাগরীয় ও উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য উপনিবেশ:
-
আলজেরিয়া (ফ্রান্সের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ ছিল)
-
তিউনিসিয়া
-
মরক্কো (মরক্কোর একাংশ)
-
জিবুতি (পূর্বে ফ্রেঞ্চ সোমালিল্যান্ড)
-
কমোরোস দ্বীপপুঞ্জ
-
মাদাগাস্কার
ফরাসি উপনিবেশের প্রভাব
১. ভাষা ও সংস্কৃতি
আজও এসব দেশের বেশিরভাগ মানুষের দ্বিতীয় ভাষা ফরাসি। সরকারি কাজকর্ম, শিক্ষা ব্যবস্থা, এবং মিডিয়ায় ফরাসি ভাষা প্রচলিত।
২. প্রশাসনিক কাঠামো
ফরাসি উপনিবেশে থাকা দেশগুলোর প্রশাসনিক কাঠামো ফ্রান্সের অনুকরণে গঠিত। এখনো অনেক দেশের সংবিধান, আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থা ফ্রান্সের মতো।
৩. অর্থনৈতিক নির্ভরতা
উপনিবেশকালে ফ্রান্স এসব দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করেছে। এখনো অনেক দেশের বাণিজ্যিক অংশীদার প্রধানত ফ্রান্স।
৪. রাজনৈতিক অস্থিরতা
উপনিবেশ পরবর্তী সময়ে অনেক দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অভ্যুত্থান হয়েছে। উপনিবেশিক শাসনের কারণে এসব দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
স্বাধীনতা ও উত্তর-ঔপনিবেশিক সম্পর্ক
১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে একে একে এসব দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। তবে ফ্রান্স ও তার প্রাক্তন উপনিবেশগুলোর সম্পর্ক এখনো জোরালো। অনেক আফ্রিকান দেশ এখনো ফ্রাঙ্কোফোন গ্রুপের সদস্য (যেখানে ফরাসি ভাষা মূল মাধ্যম)।
বর্তমানে ফরাসি প্রভাবিত আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহ
নিম্নোক্ত দেশগুলো এখনও ফ্রান্সের সাথে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে:
দেশ | স্বাধীনতার সাল | বর্তমান ভাষা | ফরাসি সামরিক ঘাঁটি |
---|---|---|---|
সেনেগাল | ১৯৬০ | ফরাসি | আছে |
আইভরি কোস্ট | ১৯৬০ | ফরাসি | আছে |
চাদ | ১৯৬০ | ফরাসি | আছে |
নাইজার | ১৯৬০ | ফরাসি | হালকা উপস্থিতি |
জিবুতি | ১৯৭৭ | ফরাসি ও আরবি | ফরাসি ঘাঁটি আছে |
উপসংহার
ফরাসি উপনিবেশবাদ আফ্রিকার রাজনীতি, ভাষা, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে গভীর ছাপ রেখে গেছে। স্বাধীনতা লাভের পরও এই প্রভাব পুরোপুরি মুছে যায়নি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলো নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলছে এবং ফ্রান্সের প্রভাব থেকে সরে এসে স্বনির্ভরতার পথে এগোচ্ছে।
Comments
Post a Comment