অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (OIC) বা ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মূলত ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমে ইসলামি পবিত্র স্থানসমূহ রক্ষার উদ্দেশ্যে। এই সংস্থার জন্মলগ্নেই ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের অধিকার, স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে ওআইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক, নৈতিক ও মানবিক ভূমিকা পালন করে আসছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে ওআইসির প্রধান অবস্থান হলো—ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সংস্থাটি জাতিসংঘের প্রস্তাবনা ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে এ বিষয়ে সোচ্চার থাকে।
ওআইসি ফিলিস্তিনের পক্ষে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করে। সংস্থাটি নিয়মিতভাবে জরুরি অধিবেশন, শীর্ষ সম্মেলন ও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করে যেখানে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং ফিলিস্তিনিদের সহায়তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা, বসতি সম্প্রসারণ এবং মুসলমানদের পবিত্র স্থানসমূহে হামলা ও অবমাননার ঘটনায় ওআইসি কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়।
ওআইসির অন্যতম অঙ্গসংগঠন হলো আল-কুদস কমিটি, যার কাজ হলো জেরুজালেমের ইসলামি পরিচয় ও পবিত্রতা রক্ষা করা এবং সেখানে মুসলমানদের অধিকার সুরক্ষা করা। এই কমিটি নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।
ওআইসি শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবিক ও আর্থিক সহায়তার দিক থেকেও ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সদস্য দেশগুলোকে ফিলিস্তিনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পুনর্বাসন খাতে সহায়তা দিতে উৎসাহিত করে ওআইসি। অনেক সময় সদস্য রাষ্ট্রগুলো সরাসরি অর্থ সহায়তা প্রদান করে অথবা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা পাঠায়।
তবে ওআইসির কার্যকারিতা নিয়ে কিছু সমালোচনাও রয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন, পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাত ও ভিন্ন ভিন্ন কূটনৈতিক অবস্থান অনেক সময় সংগঠনটির শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিছু সদস্য রাষ্ট্র যেমন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে, তেমন অনেক দেশ ফিলিস্তিন প্রশ্নে আরও কঠোর অবস্থানের পক্ষপাতী। এই ভিন্নমত অনেক সময় ওআইসির অভিন্ন নীতিমালায় প্রভাব ফেলে।
সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, ফিলিস্তিন প্রশ্নে ওআইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও এর বাস্তবিক প্রভাব সীমিত, তবুও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর হিসেবে এটি ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে একটি নৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তি হয়ে রয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ওআইসির অব্যাহত ভূমিকা মুসলিম বিশ্বের আশা ও দায়বদ্ধতার প্রতীক।
- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment